প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্লাস্টের এক নারীকর্মীর বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।
বিজিবির পক্ষে টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের দমদমিয়া তল্লাশি ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত জেসিও নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ আলী মোল্লা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে এনজিও ব্লাস্টের কর্মী ফারজানা আকতারকে (২৮)। সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে টেকনাফ থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বাদী মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন, বিজিবি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনা একটি বাহিনী। এমন একটি বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আসামি এনজিও নারীকর্মী অহেতুক উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে গণধর্ষণের মতো মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছেন, যা বিজিবির মতো একটি বাহিনীর ভাবমূর্তিতে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। এজন্যই বিজিবি আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
মামলার বাদীর আইনজীবী সাজ্জাদুল করিম ও অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ জানান, ‘আসামি ফারজানা আকতার ব্লাস্টের কক্সবাজারের টেকনাফর হ্নীলা শাখার কর্মী হিসেবে কর্মরত। তিনি অন্যান্য দিনের মতো গত ৮ অক্টোবর সকালে হ্নীলা থেকে সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে চড়ে টেকনাফ উপজেলা সদরে যাচ্ছিলেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের দমদমিয়া বিজিবি তল্লাশি ফাঁড়িতে যথারীতি সিএনজিটি থামানো হয়। সিএনজির পাঁচজন যাত্রীর মধ্যে অন্য চারজন যথারীতি নেমে নিয়মমাফিক তল্লাশির কাজে সাহায্য করেন। কিন্তু ওই নারী নিজেকে ব্লাস্ট এনজিওর কর্মী পরিচয় দিয়ে দাম্ভিকতা দেখিয়ে তল্লাশি এড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি বিজিবি সদস্যদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়।’
‘পরে বিজিবির নারী সদস্যরা এসে তাকে সিএনজি থেকে নামিয়ে তল্লাশি কক্ষে নিয়ে নিয়মমতো চেক করেন। এতে এনজিও কর্মী ফারজানা বিজিবির ওপর ক্ষুব্ধ হন। তিনি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ফাঁড়ির পুরুষ সদস্যরা তাকে গণধর্ষণ করেছেন মর্মে অভিযোগ তোলেন। এমনকি তিনি ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে টেকনাফ থানায় বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করতে যান। কিন্তু এমন মামলায় মেডিকেল সনদ দরকার জানালে ওই নারী কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীন আবদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে পরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে সনদ দেন। এ বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে তার বরাত দিয়ে সংবাদও প্রচার করে।’
‘পরে ঘটনার সত্যতা না পেয়ে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো তাদের অনলাইন থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়। কিন্তু এরই ভেতর সারা পৃথিবীর অগণিত পাঠক মিথ্যা এ অভিযোগ জেনে বিভ্রান্ত হয় এবং একটি সুশৃংখল বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মে। এতে বাহিনীর বিপুল পরিমাণ মানহানি হয়েছে।’
আইনজীবী সাজ্জাদুল করিম আরও জানান, ‘আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আগামী সাত কর্মদিবসে স্বাক্ষীদের জবানবন্দিসহ ঘটনার আদ্যপান্ত উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিতে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় ওইদিন বাদীর সঙ্গে থাকা সিএনজি যাত্রী, সংশ্লিষ্ট সিএনজিচালক ও তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্বরত বিজিবি নারী ও পুরুষ সদস্যদের স্বাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’